দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর প্রাণকেন্দ্র ‘উম্মুল মাদারিস’ খ্যাত চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক হিসাবে তার নাম ঘোষণা হয়েছিল বেলা ১১টায়।
এর কয়েক মিনিট পরেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতি আব্দুচ্ছালাম চাটগাঁমী (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।
তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি দুই স্ত্রী, সাত ছেলে ও চার মেয়ে রেখে গেছেন। দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার এ মুফতি ও মুহাদ্দিসকে মুফতিয়ে আজম বাংলাদেশ (বাংলাদেশের গ্রান্ড মুফতি) বলা হতো। মাদ্রাসার সাবেক পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর যে তিনজনের কমিটি (মজলিশে এদায়ি) মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন, তাদের প্রধান ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি পাকিস্তানের জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া বানুরি টাউন করাচির প্রধান মুফতি ছিলেন। তার ছেলে মুফতি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন বাবা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সকালে শূরার বৈঠকেও যাননি। মাদ্রাসায় নিজ কক্ষে অবস্থান করছিলেন। মহাপরিচালকের ঘোষণা শোনার পর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে শৌচাগারে যান তিনি। বের হতে দেরি হওয়ায় ভেতরে গিয়ে দেখা যায় তিনি মাটিতে পড়ে আছেন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে বেলা সাড়ে ১১টায় চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কওমি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন সহকর্মী, শিক্ষার্থী, ভক্ত-অনুরাগীরা। হাটহাজারী মাদ্রাসায় রাত ১১টায় জানাজা শেষে মাদ্রাসার ভেতরে মাকবারাতুল জামিয়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সংক্ষিপ্ত জীবনী : মুফতি আব্দুচ্ছালাম চাটগাঁমী ১৯৪৩ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার নলদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি চট্টগ্রামের জিরি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাকিস্তানের বিখ্যাত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া আল্লামা বানুরি টাউন করাচিতে ভর্তি হন। সেখানে উচ্চতর হাদিস ও ফেকাহ নিয়ে পড়াশোনা করেন। অধ্যয়নকালেই গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখে পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। তার গবেষণা অভিসন্দর্ভ মুমতাজ (ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট) সনদ পায়। পড়াশোনা শেষে সেখানেই তিনি মুফতি হিসাবে শিক্ষকতায় যোগ দেন। পরে প্রধান মুফতি হন। সেখানে ৩০ বছর অবস্থানকালে ৩ লক্ষাধিক লিখিত ফতোয়া দিয়েছেন তিনি, যা জামেয়া বানুরির ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক ও দারুল ইফতায় ৬০ খণ্ডে সংরক্ষিত আছে। ফতোয়া জগতে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘জাওয়াহিরুল ফাতওয়া’ (উর্দু, চার খণ্ড) তার লেখা। পঞ্চম ও ষষ্ঠ খণ্ড প্রকাশিতব্য। আপকা সওয়াল আওর উনকা জওয়াব (উর্দু), আহাদিছ কি রৌশনি মেঁ (উর্দু), ইসলামি মায়িশাত কে বুনয়াদি উসুল (উর্দু), ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানব অঙ্গের ক্রয়-বিক্রয় (বাংলায় অনূদিত), রহমতে আলম সা.-এর মকবুল দোয়া (উর্দু-বাংলা), মুরাওয়াজা ইসলামি ব্যাংকারি (উর্দু), হায়াতে শায়খুল কুল, তাজকেরায়ে মুখলিছ এবং মাকালাতে চাটগাঁমী তার লেখা গ্রন্থগুলো অন্যতম। আল্লামা শাহ আহমদ শফী ২০০০ সালে তাকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে এনে পরের বছর দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষকতায় নিয়োগ করেন। ২ বছর পর সেখানে উচ্চতর উলুমুল হাদিস বিভাগ চালু করেন তিনি। বিভাগটি হাদিস গবেষণায় বড় অবদান রাখছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।